ক্ষুদিরাম বসু কি জননন্দিত বিপ্লবী | নাকি স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা সৃষ্ট বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য বানানো বিপ্লবী
ক্ষুদিরাম বা মহান বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু এই নামটি ইতিহাস প্রিয় স্বাধীনচেতা মানুষের মুখে মুখে। উনার নাম শুনেন নাই এরকম লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ক্ষুদিরাম কে বলা হয় সব ছেয়ে কম বয়স্ক বিপ্লবী যিনি ঘটনার পরম্পরায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর সৈনিক হিসাবে জননন্দিত হয়েছেন।
যাই হোক - আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের কে ইতিহাস থেকে কিছু তথ্য শেয়ার করব - যা ক্ষুদিরাম কি আসলেই ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের হিরো ছিলেন নাকি তাকে স্বার্থান্বেষী মহল তাকে হিরো বানিয়েছেন? চলুন তাহলে ঘটনার পেছনের ঘটনা জানার চেষ্টা করি।
পেজ সুচি পত্র
- বিপ্লবী ক্ষুদিরাম নিয়ে প্রাথমিক বক্তব্য
- ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি ও বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
- বিপ্লবী সংগঠনের আড়ালে বঙ্গভঙ্গ রদ
- কে এই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
- বর্ণবাদী আন্দোলনের সাথে ক্ষুদিরাম বসু কি সম্পৃক্ত নয়
- মহান বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু নিয়ে সমাপনী বক্তব্য
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম নিয়ে প্রাথমিক বক্তব্য
ব্রিটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি ও বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
ব্রিটিশদের শাসন ক্ষমতার মুল সুত্র ছিল 'ডিভাইড এন্ড রুল'। সেই সুত্রে ১৯০৫ সালে যে বাংলাকে ভাগ করা হয় এটা আমরা যারা রাজনীতি সচেতন তারা মোটামুটি সবাই জানি। অবিভক্ত বাংলার বিভাজন করা মানে অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গ মানে ঢাকা কেন্দ্রিক মুসলিম নেতৃবৃন্দের কদর বাড়িয়ে দেওয়া। কেননা তারা নতুন একটি প্রদেশ পাবে যার রাজধানী হবে ঢাকা। তারা চিন্তা করছিল যে এখানে নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপিত হবে। বিনিয়োগ বাড়বে। পূর্ব বাংলার অর্থনীতি কলকাতার সমকক্ষ বা প্রতিযোগী হবে। মুসলমানেরা তাদের হারানো জমিদারি ফিরে পাবেন। হিন্দু মুসলিমের বৈষম্য কমবে।
বিপ্লবী সংগঠনের আড়ালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ
মূলত ১৯০০ সালের শুরুর দিক থেকে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ব্রিটিশ সরকার যখন বাংলাকে বিভাজন করা হবে এরকম বার্তা জোরালো ভাবে দিতে থাকেন তখন থেকে ওই স্বার্থান্বেষী হিন্দু সমাজ এর বিরোধিতা করতে থাকে। ইংরেজ হটাও আন্দোলনের আড়ালে ওই সময়ে তারা পুরো বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠন গড়ে তোলে যাতে বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলনে কাজে লাগে।
সে সংগঠনগুলোর মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে থাকে এবং তারা চিন্তা করে যখন এ ধরনের কোন সমস্যা তৈরি হবে যখন তাদের কথা না শুনে ব্রিটিশরা বঙ্গকে ভাগ করে ফেলবে তখন এই সংগঠনের মাধ্যমে জুড়ালো আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
এবার জানা যাক - সে সংগঠনগুলোর নাম কি কি ছিল তা জেনে নিই। ঢাকা অঞ্চলে অনুশীলন সমিতি। কলকাতা অঞ্চলে যুগান্তর সমিতি। বরিশালের বান্ধব সমিতি। ফরিদপুরের ব্রতী কিংবা ময়মনসিংহের সুহৃদ সমিতি।
এগুলোর মধ্যে সবচাইতে কার্যকর ছিল ঢাকার অনুশীলন এবং কলকাতার যুগান্তর সমিতি। এদের বিভিন্ন শাখা ছিল এবং এই শাখা গুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন অভাবী, ডানপিটে স্বভাবের তরুন বা কিশোরকে দলে বিরিয়ে করে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত করতেন।
তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের চরমপন্থী প্রশিক্ষণ দিতেন। যেমন - অস্ত্র চালানো থেকে বোমা বানানো পর্যন্ত ইত্যাদি ইত্যাদি। যাতে করে পরবর্তী সময়ে ঠান্ডা বা নরম বা অহিংস আন্দোলনে বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে একটা বড় ধরনের সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তোলা যায়। মোট কথা, পূর্ব বাংলার সংখ্যা গরিষ্ট মুসলিম সমাজের কোনভাবেই যাতে মংগল না হয়। এটা কি একধরনের বর্ণবাদী চিন্তা নয়।
আর আজকের আর্টিকেলের মূল নায়ক যার নাম তিনি হচ্ছেন ক্ষুদিরাম বসু। আর ক্ষুদিরাম ছিলেন ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে জড়িত একটা সসস্ত্র বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য। এখন একটু ভাবনার পালা আসলে সমিতির সদস্য হয়ে ক্ষুদিরাম কি করেছেন? অপেক্ষা করুন। ইতিহাসের নির্মম সত্যটা আসলে কি নিম্নের আলোচনায় আরো পরিস্কার ভাবে জানতে পারবেন।
কে এই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
সে আমলে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে এতটা উন্নত ছিল না। তাই ক্ষুদেরও একটা আর্থিক ভ্যালু ছিল। আর হ্যাঁ - ক্ষুদের বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে তার নাম হয়ে যায় ক্ষুদিরাম। তার পুরো নাম হচ্ছে ক্ষুদিরাম বসু।
মাত্র সাত বছর বয়সে ক্ষুদিরাম বাবা মাকে হারিয়ে একদম অসহায় এবং নিঃস্ব হয়ে যান। এ সময় তিনি তার এক দূর সম্পর্কীয় বোনের বাসায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখানে থেকে তিনি বড় হতে থাকেন। স্কুলেও ভর্তি করানো হয়। তবে তার ভবঘুরে আচরণ ও অমনোযোগিতা ও ডানপিটে স্বভাবের কারণে পড়াশোনা আর করা হয়নি।
তবে ঐ যে সমিতি গুলোর কথা লিখছিলাম, যেমন - যুগান্তর সমিতি, অনুশীলন সমিতি, বন্ধন সমিতি এবং সুহৃদ সমিতি যেগুলো ডানপিটে, ভবঘুরে, পরিবারবিহীন, অভাবী ও উগ্র স্বভাবের হিন্দু ছেলেদের খুঁজে বের করত। অন্য ধর্মের কোন লোককে এ সমিতির সদস্য হিসাবে এলাও করা হতনা। হিন্দু ধর্ম ছুঁয়ে তাদেরকে শপথ করানো হত।
ঐ সমিতিগুলো তাদেরকে বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত করত এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। এরকম একটা প্রক্রিয়ায় ক্ষুদিরাম যুগান্তর সমিতির নজরে আসে এবং তাকে দলভুক্ত করা হয়। সেখানে সে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেতে থাকে, অস্ত্র চালানো থেকে বোমা বানানো। এই সমিতির পক্ষ হয়ে বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণ করে থাকে। এখানে বলার অপেক্ষা রাখেনা- অভাবও একটা কারন হতে পারে বিপ্লবী দলে ভাড়াটে সদস্য হিসাবে যোগদানের।
আগেই উল্লেখ করেছি বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে আসছিলেন কলকাতা কেন্দ্রিক হাইসোসাইটির হিন্দু সমাজ অর্থাৎ জমিদার, ব্যবসায়ী, আমলা, সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবি। তারা মূলত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, পদযাত্রা, বিভিন্ন কবিতা, গান, নাটক এবং প্রবন্ধ রচনার মাধ্যমে এর বিরোধিতা করে আসছিল। এমনকি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধনের আয়োজন করে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বর্ণবাদী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু
কিন্তু এই সমস্ত ধীরগতির শান্তশিষ্ট আন্দোলনের মাধ্যমে আসলে ব্রিটিশ সরকারের মত পাল্টানো যাচ্ছিল না। তাই বিরোধীদের একাংশ ঐ যে সমিতিগুলো সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা সশস্ত্র আন্দোলনে যাবেন। তারা মনে করলেন সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। রক্তাক্ত আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
আর এ আন্দোলন কারা করবে? ওই যে সমিতির কথা - যুগান্তর, ব্রতী, অনুশীলন আর সুহ্রদ - ওই সমিতির যে সমস্ত বিপ্লবী যাদেরকে ধরে এনে প্রশিক্ষণ দিয়ে বানানো হয়েছিল তাদেরকে ব্যবহার করে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে দেওয়া হয়।
তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন গুপ্ত হত্যায় পাঠানোর পরিকল্পনা হয়। ইংরেজদেরকে আক্রমণ ও হত্যার এবং গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটানো ইত্যাদি ইত্যাদি নানান ধরনের হিংসাত্মক কাজের পরিকল্পনা করা হয়। এবার কি একটু চিন্তা করে দেখা যায়না এ কাজগুলোর মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?
ব্রিটিশ সরকার যে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা রদ করে ফেলা। বঙ্গভঙ্গের সাথে ঢাকা কেন্দ্রিক মুসলমানদের সাথে একটা স্বার্থ জড়িত ছিল তা দূরে সরিয়ে রাখা। অর্থাৎ মুসলমানদের কোন রকম অগ্রগতি হিন্দু এলিটদের কাছে অসহ্য ছিল। এটাকে কি সাম্প্রদায়িকতা বা রেসিজম নয়?
ক্ষুদিরাম কি স্বেচ্ছায় বিপ্লবী নাকি কোন নিজ স্বার্থে বিপ্লবী
নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখে প্রমান হয় যে বিপ্লবীরা নিজের ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করেনি বরং একটা গোষ্ঠী তাদেরকে ব্যবহার করেছে মাত্র। এবং ক্ষুদিরাম বসু ছিল নিয়োগ করা বিপ্লবীদের একজন যার নিঃস্বার্থতা প্রমাণ করা অসম্ভব বটে।
তো ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন ক্ষুদিরাম যুগান্তরের একজন সদস্য। সুতরাং যুগান্তরের বিভিন্ন মিশনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এবং এক পর্যায়ে তাকে মোজাফ্ফরপুরে পাঠানো হয় ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য।
১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল চাকীকে পাঠানো হয়। তারা সেখানে অবস্থান করতে থাকে। এক সময় ইউরোপীয় ক্লাব থেকে একটি গাড়ি বেরিয়ে আসে যে গাড়িকে লক্ষ্য করে ক্ষুদিরাম বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু হিসাবে ভুল ছিল। গাড়ির ভিতর আসলে কিংসফোর্ড ছিলেন না। ছিলেন সেখানে একজন ইংরেজ মহিলা এবং তার কন্যা। দুজনেই সেখানে তারা নিহত হন।
দাবি আদায় করতে গিয়ে ক্ষুদিরাম একটি গোষ্ঠীর পক্ষ হয়ে এখানে নিরীহ দুজন মানুষকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম কে ধরা হয় এবং তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। প্রফুল্ল চাকী নিজের বন্দুকে আত্নহত্যা করেন।
সরলভাবে যদি বলি ক্ষুদিরাম একটা গোষ্টির পক্ষ হয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন এবং ওই গুষ্টির কথা মত ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংস ফোর্ডকে হত্যার জন্য ভিন্ন দুজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ফেলেন।
তার মানে ক্ষুদিরাম কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী কিংবা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন করেননি বরং তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন রদ করার জন্য ইংরেজ হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদিও সে নিজের ইচ্ছায় সে আন্দোলনে যোগদান করেছেন কিনা তা শতভাগ বলা যাবে না।
একটা গোষ্ঠি তাকে বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তাকে ব্যবহার করেছেন মাত্র। সেই সাথে তিনি এ আন্দোলনে ব্রিটিশ সরকারের কোন উচ্চপদস্থ কাউকে হত্যা করতে পারেননি বরং হত্যা করেছেন দুজন নিরিহ মানুষকে।
কিন্তু তার এই গল্পটাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। বুঝানো হয় যে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী এ আন্দোলনটাকে স্বদেশী আন্দোলন বলে বা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এবং এটাকে সারা ভারতবর্ষে বিরাট এক ত্যাগ হিসাবে প্রচার চলে।
বিভিন্ন কবিতা, নাটকে এবং গল্পের মাধ্যমে প্রচার পেয়ে এক ক্ষুদে বালকের স্বাধীনতার জন্য আত্বত্যাগ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। যাকে মোটেও সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারন পুরো ঘটনার সাথে রেসিজম জড়িত ছিল।
ক্ষুদিরামের আত্বত্যাগকে স্বরণে নেওয়ার জন্য বিখ্যাত গান রচনা করা হয়েছে। যে গান শুনেনি এরকম লোক খুঁজে পাওয়া প্রায়ই অসম্ভব। গানটি হচ্ছে নিম্নরূপ:
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি। এই গানটি পরবর্তী সময়ে উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর ও গেয়েছিলেন। এই গানের ভিতরে একটা ইন্টারেস্টিং ক্লু বা লাইন রয়েছে। যে লাইনটা এরকম। বড়লাটকে মারতে গিয়ে মারলাম আরেক ইংল্যান্ড বাসি।
একটু চিন্তা করে দেখেন ওই সময় ব্রিটিশ ভারতে বড়লাট কে ছিলেন? বড় লাট ছিলেন লর্ড কার্জন। তার মানে এই গানে বুঝানো হয়েছে তিনি লর্ড কার্জনকে মারতে গিয়েছিলেন। যদি কার্জনকে মারতে গিয়ে ধরা পড়ত তাহলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলা যেতে পারত।
কিন্তু তিনি লর্ড কার্জনকে মারতে যাননি, তিনি মারতে গিয়েছেন কলকাতার ম্যাজিস্ট্রেট কিংসপোর্ডকে। তিনি কিন্তু কিংসফোর্ডকে মারতে পারেননি বরং তিনি মেরেছেন নিরীহ দুজন নারীকে। কিন্তু গানের ভিতরে বলা হয়েছে কার্জনকে মারতে গেছেন।
সরলভাবে যদি বলি ক্ষুদিরাম একটা গোষ্টির পক্ষ হয়ে বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন এবং ওই গোষ্টির কথা মত ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংস ফোর্ডকে হত্যার জন্য ভিন্ন দুজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ফেলেন।
এভাবে বিভিন্ন গান, নাটক এবং গল্পের মাধ্যমে ক্ষুদিরামের কাজটাকে প্রচার করা হয়েছে। একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদীর সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বিপ্লবীরা সফল হয়েছে। আর তাকে রাতারাতি হিরো বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আসল ঘটনা হল - এরকম তিনি যে বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ছিল না। বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে তিনি নিজের ইচ্ছাতে এ বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন নাই। তাকে একটা হিন্দু এলিট মহল ব্যবহার করেছেন মাত্র। যাতে বঙ্গভঙ্গ না হয়।
তো এবার আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই আপনি ব্যাপারটা কিভাবে দেখবেন? ক্ষুদিরাম যে এ কাজটি করেছেন, তাকে যে ভাবে গ্লোরিফাই করা হয়েছে, এখনও বিভিন্ন জায়গায় নাটকে তার কাহিনী টাকে উপস্থাপন করা হয় এবং ওই গানটাই যে গানটাতে একটা ভুল বার্তা দেওয়া আছে সেটাকে এখনো চারদিকে শুনানো হচ্ছে। এই হচ্ছে মূল কাহিনী।
মহান বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু নিয়ে সমাপনী বক্তব্য
আসলে ক্ষুদিরাম কি মূল হিরো ছিলেন, নাকি তাকে হিন্দু দের স্বার্থে হিরো বানানো হয়েছে। প্রশ্ন আপনার কাছে দিয়ে দিলাম। এখন আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন কেন আমি ব্যাপারটাকে উল্টো করে বুঝতেছি?
এই কথাগুলো আমি কেন এভাবে বললাম? কোন রেফারেন্সের ভিত্তিতে আমার মতামত দিলাম? নাকি আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে বললাম? দেখুন একটি না একাধিক রেফারেন্স আছে। ইতিহাসের অলিগলি গুলো আপনি যদি খুঁজে খুঁজে পড়েন তাহলে আপনিও বুঝে যাবেন পুরো ব্যাপারটা আসলে কি?
ক্ষুদিরামের এ বীরত্ব সমগ্র ভারতবাসীর জন্য কাজে লাগেনি বরং অনেকটা বঙ্গভঙ্গ রহিত করার জন্য কাজে লেগেছে। বিপ্লবী সমিতির আক্রমনাত্বক আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত কলকাতার এলিট সমাজ জয়ী হয়েছে, পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজ অধিকার বঞ্চিত হয়েছে।
আর ক্ষুদিরাম যেহেতু মুসলিম স্বার্থবিরোধী কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই তাকে সর্বভারতীয় মহান বিপ্লবী না বলার যথেষ্ট কারন রয়েছে। কারন স্বধর্মের মানুষের স্বার্থ রক্ষায় তিনি তার জীবন আত্নাহুতি দিয়েছেন। নিজের নাক কেটে পূর্ববাংলার মুসলমানের উন্নয়ন যাত্রা থামিয়ে দিয়েছেন। এক কথায় ক্ষুদিরাম বসু একজন প্রশ্নবিদ্ধ বিপ্লবী।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন