তালাক নিয়ে কুরআন ও হাদীস কি বলে | বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স নিয়ে দেশের আইন-কানুন
পেজ সুচীপত্র
- তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে প্রাথমিক বক্তব্য
- বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দেশের আইন কি বলে
- কাউন্সেলিং করুন
- বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের কারণগুলি জানুন
- পিটিশন ফাইল করুন
- শুনানিতে যোগ দিন
- শর্তাবলী পালন করুন
- বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া নিয়ে বা বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে ইসলাম কি বলে
- পুনর্মিলনের চেষ্টা করুন
- ঠান্ডা মাথায় সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন
- অপেক্ষার সময়কাল পর্যবেক্ষণ করুন
- চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছাঁনো
- বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে সমাপনী বক্তব্য
তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে প্রাথমিক বক্তব্য
সভ্যতার প্রয়োজনে দুজন নারী পুরুষের সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়ার জন্য বিবাহ বা বিয়ে নামক প্রাচীন চুক্তির আবির্ভাব হয়েছে।
ধর্মীয় রীতি নীতি ও দেশের আইন বলে বিয়ে নামক চুক্তি সম্পাদিত হয় যেখানে এক পক্ষে থাকে বর এবং আরেক পক্ষে থাকে কনে। এ চুক্তি বলে দুজন প্রাপ্র বয়স্ক বিপরীত লিংগের মানুষ মৃত্যু অবধি কাটিয়ে দেয়।
পরিবেশ পরিস্তিতির কারনে অনেক সময় তাদের আজীবন একসাথে থাকার চুক্তিকে ডিভোর্স এর নিয়ম কানুন মেনে ভেংগে দেবার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এ ক্ষেত্র অনেক সময় বুঝে হয় আবার অনেক সময় না বুঝে হয়।
আরো পড়ুন>>>ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন | দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা
এই প্রাচীন চুক্তি ভেংগে দেওয়া কোন সহজ বিষয় নয়। খুব সাবধানতার সাথে বিষয়টাকে মোকাবেলা করা দরকার। না হলে স্বামী-স্ত্রীর ও তাদের সন্তানদের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে।
বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স যে কোনো সমাজ-রাষ্ট্র ও সংস্কৃতিতে একটি অশুভ বিষয় এবং সংখ্যা গরিষ্ট মুসলমানের দেশ হিসাবে বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
ইসলাম নারী পুরুষের বৈধ সম্পর্ককে খুব বেশী উৎসাহ দেয়, তারপরেও দুজন মানুষের মধ্যে অনেক সময় মনের অমিল ও চাওয়া পাওয়ার হের ফেরের কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রয়োজন হয়। না হলে সমাজে বিশৃংখলা দেখা দিবে।
বাংলাদেশী মুসলিম দম্পতি হলে ইসলামিক আইন ও বাংলাদেশের বিবাহ বিচ্ছেদের আইন মেনেই সেপারেশন কার্যকর করতে হয়।
তালাক নামক এই সংবেদনশীল বিষয়ে যে কেন দম্পতির জানা উচিৎ যদি তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানার ক্ষেত্র তৈরী হয়।
আজকের নিবন্ধের আলোচনার বিষয় কুরআন ও হাদিস এবং দেশের প্রচলিত আইন অনু্যায়ী তালাকের জন্য কোন কোন পদক্ষেপ অনুসরন করবেন তা নিয়ে। তাহলে চলুন সে পদক্ষেপ গুলো জানার জন্য নিম্মের আলোচনায় মনোযোগ দিন।
তালাক বা বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য বা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দেশের আইন কি বলে
কাউন্সেলিং করুন
বিবাহ বিচ্ছেদের বা তালাকের সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে, পরামর্শ বা কাউন্সেলিং এর বিকল্প নেই। কারন মানুষ মাত্রই ভুল করে ভুল সিদ্ধান নেয়। কাউন্সেলিং আপনারা স্বামী স্ত্রী উভয়কে নিজস্ব অনুভূতিগুলি অন্বেষণ করতে, আপনাদের মতবিরোধের মূল কারণগুলি খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। সমস্যা সনাক্ত করে সমাধান বের করতে পারলে পুনর্মিলনের কাজ সহজ থেকে সড়জতর হয়।
ইসলাম বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করাকে কে কোনভাবেই সমর্থন করে না এটাকে শুধুমাত্র শেষ অবলম্বন হিসেবে সাপোর্ট করে। তাই তালাক কার্যকরের আগে বিজ্ঞজনের পরামর্শ এবং পুনর্মিলনের ক্ষেত্র খুঁজা উচিত।
বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের কারণগুলি জানুন
বাংলাদেশী মুসলিম দম্পতিদের তালাকের প্রয়োজনে অবশ্যই ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসরণ করতে হবে। এই আইনটি এ দেশের বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকরের নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে।
একটি পিটিশন ফাইল করুন
কাউন্সেলিং এবং পুনর্মিলনে সফল না হলে, পরবর্তী ধাপে পারিবারিক আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করতে হবে। পিটিশনে বিবাহ বিচ্ছেদের বা ডিভোর্সের যথাযথ কারণ ও প্রমান উল্লেখ করতে হবে। এরপর আদালতের শুনানির দিন ধার্য করার পালা।
শুনানিতে যোগ দিন
যথারীতি শুনানিতে উভয় পক্ষই তাদের যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ পাবে। বিচারক উভয় পক্ষের দেখানো কারণ ও যূ্ক্তি শুনবেন। এবং বিচারক যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন তালাকে বৈধ কারণ আছে, তাহলে উনি বিবাহ বিচ্ছেদের রায় বা ডিক্রি জারি করবেন। ডিভোর্স এর রায়ের মধ্যে সন্তানদের হেফাজত, সম্পদের বিভাজন এবং ভরণপোষণ কিভাবে হবে তার একটা রূপরেখা বা শর্ত থাকবে।
শর্তাবলী পালন করুন
বিবাহ বিচ্ছেদের রায় হলে উভয় পক্ষকেই মামলা নিষ্পত্তির শর্তাবলী মান্য করতে হবে। এতে সন্তানের ভরণপোষণ, সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা করা এবং সন্তানরা কার হেফাজতে থাকবে তা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। নিষ্পত্তির শর্তাবলী না মানলে জরিমানা এবং কারাদণ্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
ডিভোর্স বা বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া নিয়ে বা বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে ইসলাম কি বলে
পুনর্মিলনের চেষ্টা করুন
আপনি একজন মুসলিম হিসেবে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বিবেচনা করার আগে কিভাবে ছাড় দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ককে সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার কথা চিন্তা করুন।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম, বৈবাহিক সমস্যা সমাধানের প্রথম উপায় হিসাবে পুনর্মিলনকে উৎসাহিত করেছেন।
সূরা আন-নিসার ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, "এবং যদি তোমরা তাদের মধ্যে ফাটলের আশংকা কর, তবে তার সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে একজন সালিস এবং তার সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে একজন সালিস নিযুক্ত কর, যদি তারা উভয়েই মিলন চায়, তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বদা [সবকিছুর সাথে] জ্ঞাত ও পরিচিত।"
অতএব, বিবাহ ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে, স্বামী-স্ত্রীর উচিত পরিবারের মান্যবর কোন সদস্য বা সমাজের কোন মান্য গণ্য লোকের মধ্যস্থতার সাহায্যে তাদের নিজেদের মতপার্থক্য মিটমাট করার মাধ্যমে তালাক কার্যকর করার চেষ্টা হতে বিরত থাকা।
ঠান্ডা মাথায় সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন
যথাযথ চেষ্টার পরও যদি মতপার্থক্য মিটমাট করা না যায় এবং এবং পুনর্মিলনের সম্ভাবনা নাকচ হয়, দ্বিতীয় ধাপ হল ঠান্ডা মাথায় সময় নিয়ে তালাক উচ্চারণ করা।
এটি একটি আরবি শব্দ। স্বামীর উচিত হবে দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এবং পবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ ওযু করার পর) তালাক শব্দটি স্পষ্টভাবে ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উচ্চারণ করা উচিত।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ যে স্বামী রাগের মাথায় বা যৌক্তিক কারন ছাড়া কখনো এ অশুব শব্দটি উচ্চারণ করবেন না, কারণ এটি যুগলের ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
অপেক্ষার সময়কাল পর্যবেক্ষণ করুন
ঠান্ডা মাথায় তালাক উচ্চারণের পর, দম্পতিকে ইদ্দত পালন করতে হবে। স্ত্রীর জন্য তিনটি মাসিক চক্র বা মাসিক না হলে তিন মাস হচ্ছে ইদ্দত কাল। এর মাধ্যমে দুটা বিষয় নিয়ন্ত্রন করা হয়। এক মহিলাটি যেন গর্ভবতী না হয় তা নিশ্চিত করা। এবং দুই মিলনের সুযোগ প্রদান করা। এই সময়ের মধ্যে, দম্পতি কোনও যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া বা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একসাথে বসবাস করা যাবেনা।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছাঁনো
ইদ্দতের সময় দম্পতির মধ্যে মিটমাট না হলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পর চুড়ান্ত তালাক হয়ে যায়। ইদ্দত কাল শেষে যে কোন পুরুষকে ঐ নারী বিয়ে করতে পারবেন।
বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার পর পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে, নতুন বিবাহ চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় বিয়ে করতে হবে।
সমাপনী বক্তব্য
ডিভোর্স বা তালাক যেকোন বাংলাদশী মুসলিম দম্পতির ও তাদের সন্তানদের ও তাদের বাবা মার জন্য একটি কঠিন ও আবেগঘন সিদ্ধান্ত।
এই অশুভ পদক্ষেপ গ্রহনের পূর্বে পারিবারিক আইনজীবী, বিজ্ঞ শুভাকাঙ্ক্ষীদের এবং পরামর্শদাতার মতো যোগ্য পেশাদারদের কাছ থেকে উপদেশ নেওয়ার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদে ইচ্ছুক দম্পতিরা নিজেদেরকে আবার যাচাই করে নিবেন।
দুজন নর নারীর মানসিক এবং শারীরিক প্রশান্তির জন্য কুরআন ও হাদিসের দেখানো পথ এবং ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন মানার উপায় উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন।
না বুঝলে বুলেট পয়েন্ট আকারে আবোরো উল্লেখ করলাম।
- বিজ্ঞজনের পরামর্শ নেওয়া
- পুনর্মিলনের চেষ্টা করা
- পারিবারিক আদালতে মামলা করা
- তালাক উচ্চারণ করা
- ইদ্দাহ পালন করা এবং
- চূড়ান্ত করা
- নিষ্পত্তির শর্ত মানা
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন