রাইট এন্ড গ্রু https://www.wewritengrow.com/2023/05/blog-post.html

ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন | দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা

বিয়ে হচ্ছে সেই বিখ্যাত প্রবাদ ‘দিল্লিকা লাড্ডু জো খায়া ও পস্তায়া, জো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া’ এর মতো। তার মানে বিয়ে করলেও বিপদ- আবার না করলেও বিপদ।

এ কারণে বলা যায় বিয়ে করে বিপদে পড়াই বরং ভাল। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর যেহেতু বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়, সেহেতু তাকে ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন যা আছে তা জানা একান্ত প্রয়োজন।

ছবিতে-বর-কনের-মালা-বদলের-ছবি
Credit: SAM PANTHAKY/AFP via Getty Images

যারা নতুন বিয়ের কথা ভাবছেন তাদের অবশ্যই ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন বা দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা  আছে তা মানা প্রয়োজন বিধায় আজকের নতুন এই পোষ্ট।

পেজ সূচীপত্র

প্রাথমিক বক্তব্য

আপনি কি জানেন পৃথিবীর সবচাইতে প্রথম সম্পর্ক কি? পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন সম্পর্ক কি? পৃথিবীর সবচাইতে দামি সম্পর্ক কি? শুনলে বেমানান লাগতে পারে। তারপরেও বলছি সেটা হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। বিয়ের মাধ্যমে এ সম্পর্কটা সৃষ্টি হয়। এই সম্পর্কটাই হচ্ছে বিবাহিত জীবন। 

বিবাহিত জীবনের অপর নাম দাম্পত্য জীবন বা সংসার জীবন। বিয়েতে বর কনের মতামতের মিল যেমন প্রয়োজন, তেমনি মানতে হয় ধর্মীয় নিয়মের পাশাপাশি দেশের সরকার প্রণীত কিছু আইনও।

বিয়ে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ক্ষুদ্রতম সংগঠন যা একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি যার উপর নির্ভর করে মানব সভ্যতা এখনো টিকে আছে।

তাই ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন বিধায় বিবাহিত জীবনে বা দাম্পত্য জীবনে বা সংসার জীবনে পদার্পণের জন্য আমাদের আজকের আলোচনায় মনোযোগ দিন।

দাম্পত্য জীবন কাকে বলে

প্রকৃতিগত-ভাবে নর নারীকে আকর্ষণ করে এবং নারী নরকে আকর্ষণ করে। প্রাপ্ত বয়সে পরস্পর একত্র হওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। এই একত্র হওয়াকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য প্রত্যেক ধর্মেই বিয়ের প্রথা প্রচলিত আছে। বিয়ে একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পত্র। বিয়ে সবচাইতে প্রাচীন এবং ছোট একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে এক পক্ষ এক জন নর এবং আরেক পক্ষ এক নারী। একে কেউ বলে সংসার জীবন আবার কেউ বলে বিয়ে পরবর্তী জীবন আবার কেউ বলে দাম্পত্য জীবন।

বিয়ে হচ্ছে সেই বিখ্যাত প্রবাদ ‘দিল্লিকা লাড্ডু জো খায়া ও পস্তায়া, জো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া’ এর মতো। তার মানে বিয়ে করলেও বিপদ- আবার না করলেও বিপদ। এ কারণে বলা যায় বিয়ে করে বিপদে পড়াই বরং ভাল।

বিয়ের মাধ্যমে দু জন নর-নারী মৃত্যু অবধি একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনের অঙ্গীকার বা চুক্তি করে।এ চুক্তি বলে নর ও নারী যথাক্রমে স্বামী ও স্ত্রী নামে অভিহিত হয়। শত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও স্বামী- স্ত্রীর এক সাথে যাপিত জীবনকে দাম্পত্য জীবন বলে। এ জীবন শুরু করার জন্য ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা নিয়ে যা বলা আছে তা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।

বিবাহিত জীবন কাকে বলে

বিয়ে হল দুজন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম ভালবাসা বজায় রাখার মাধ্যমে মনের মিল রেখে হাতে হাত রেখে পথ চলা। প্রেম হল যে কোনও বিয়ে টিকে থাকার জন্য সফল ভিত্তি। দুজন নর-নারীর মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে বিবাহিত জীবন টিকে থাকে। 

বিবাহিত জীবন - দুজন দুজনার মধ্যে একটা আইনগত সম্পর্ক এখানে মতামতের অমিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ভিন্ন মত কে কৌশলে হ্যান্ডল করার মাধ্যমে বিয়ে নামক সংগঠনটি টিকে থাকে।

আরো পড়ুনঃ দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য চাণক্যের ৫টি নীতি!

দুজন নর-নারীর মধ্যে একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে বিবাহ। বিবাহিত জীবন মানেই হচ্ছে প্যারেন্টিং। বিয়ের মাধ্যমে দম্পতিরা আইনসম্মত বাবা-মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। অবশ্য অনেক সমাজে বিয়ের রীতি নীতি না মেনেও বাবা মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

মুসলিম সমাজে বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়স্ক দুজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে যৌন মিলনের আইন সম্মত অধিকার জন্মায়। যার ফলে তারা আইন সম্মত বাবা-মা হওয়ার অধিকার রাখে।

দুর্দান্ত বিবাহ হল অংশীদারি-ত্ব। অংশীদারি-ত্ব না হলে এটি দুর্দান্ত বিবাহ হতে পারে না।– হেলেন মিশেন

পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে পারে। অন্য অনেক প্রাণী পারেনি বলে পৃথিবীতে থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হয়ে পৃথিবীতে এখনো আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। 

তার অন্যতম কারণ হচ্ছে - মানুষ সব সময় দলবদ্ধভাবে আইন কানুন মেনে বিয়ে নামক সংগঠনের ছায়াতলে থেকেছে। তাই আপনিও যদি এ সংগঠনের সদস্য হতে চান তাহলে ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা জানা থাকা দরকার।

সংসার জীবন কাকে বলে

দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণ-তরুণী একটি দ্বিপক্ষীয় দেওয়ানী চুক্তির মাধ্যমে (যা বিবাহ নামে পরিচিত) শত বাঁধা বিপত্তির মধ্যেও সারা জীবন একই ছাদের নীচে জীবন কাটানোর নামই হচ্ছে সংসার জীবন। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মন জয় করেই সংসার নামক তরীটাকে তীরে বেড়াতে হয়।

প্রত্যেক নর-নারীর যেহেতু প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বিয়ের পিড়িতে বসে সংসার জীবনের পক্ষ হতে হয়, সেহেতু আপনাকে দেশে প্রচলিত বিয়ের নিয়ম কানুন জেনে সংসার জীবনে প্রবেশ করতে হয়।

দুজন নর-নারীর মধ্যে এক অম্ল-মধুর বন্ধনই সংসার জীবন। নিজেদের সন্তান সন্ততি ও বাবা-মা সংসারের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংসারের অপর নাম হচ্ছে পরিবার। মানব সভ্যতা পরিবার প্রথার উপর টিকে আছে। আর পরিবার প্রথা শুরুই হয় দেশে দেশে বিদ্যমান ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে।

মুসলিম বিবাহ আইন | ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন

বিবাহ নামক সবচেয়ে প্রাচীন এই দেওয়ানি চুক্তিকে বাংলাদেশে বৈধ করার জন্য ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা সমুহ আপনাকে মান্য করতে হবে।

বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স

মুসলিম আইনে বিয়ের জন্য স্পষ্টত: কোন বয়স নির্ধারণ করা নেই। কিন্তু প্রত্যেক মানুষ যেহেতু কোনও না কোনও রাষ্ট্রের সীমানায় অবস্থান করে উক্ত রাষ্ট্রের আইন কানুন মেনে চলতে হয় - সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও মুসলিম নর-নারীর বিয়ের ক্ষেত্রে দেশের বেশ কিছু আইন কানুন মেনে চলতে হয়। যেমন- বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন - ২০১৭ মেনেই বরের বয়স হবে কমপক্ষে ২১ বছর এবং কনের বয়স হতে হবে অন্তত ১৮ বছর।

বিয়ের জন্য প্রস্তাব ও সম্মতি

বয়সের বাধা অতিক্রম করলেও দুজনের সম্মতি ছাড়া ইসলামে বিয়ে বৈধ নয়। কারণ পূর্বেই বলা হয়েছে বিয়ে যেহেতু এক ধরনের দেওয়ানি চুক্তি তাই এখানে দুইটা পক্ষ জড়িত। এ চুক্তিতে একপক্ষকে প্রস্তাব দিতে হয় এবং অপরপক্ষকে প্রস্তাবের সম্মতি জানাতে হয়। দুপক্ষের অমতে কোন বিয়ের চুক্তি নাজায়েজ।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় কনে পক্ষ অথবা ছেলে পক্ষের হতে একজন উকিল থাকেন। উকিল প্রথমে কনেকে জিজ্ঞাসা করেন বিয়েতে রাজি আছে কি না?  কনে রাজী থাকলে তার পর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন বিয়েতে রাজি আছে কি না? উভয়ের সম্মতিতে দোয়া কালামে পড়িয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।

বিয়ের দেন মোহর

মুসলিম আইনে স্ত্রীকে স্বামীর দেনমোহর প্রদান করা ফরজ অর্থাৎ অত্যাবশ্যক এবং এর গুরুত্ব বুঝা যায় স্বয়ং পবিত্র কোরআনের আয়াতে।

আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশী মনে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে পারে। - সূরা নিশা ৪ নাম্বার আয়াত।

স্ত্রী যদি কোনও রকম চাপ প্রয়োগ ছাড়া কিছু অংশ মাফ করে দেয় তাহলে তা স্বামীর জন্য ফরজের বরখেলাপ হবে না। বাংলাদেশের রীতি - নীতি অনুযায়ী বিয়ের সময় পুরো দেনমোহর পরিশোধ করা হয় না। উভয় পক্ষের সম্মতিতে কিছু অংশ নগদে আর কিছু অংশ বকেয়া রাখা হয়।

এমতাবস্থায় কেউ যদি লোভে পড়ে বাকি অংশ না দেওয়ার তালবাহানা করে তাহলে স্বামীকে এর জন্য জঘন্য ভাবে ভ‌ৎসনা করা হয়েছে।

রসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে কিন্তু দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌র নিকট ব্যভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে– (মুসনাদে আহমাদ)

এ থেকে ধরে নেওয়া যায় - ইসলাম কোনভাবেই দেনমোহরের চালাকিকে বরদাস্ত করে না। তাই স্বামী বা স্বামীর পক্ষের লোকের উচিত সাধ্যমত দেনমোহর ঠিক করা যাতে স্বামীর দেনমোহর পরিশোধ করা সহজ হয়।

বিয়ের জন্য সাক্ষী

বিয়ের জন্য বয়স, প্রস্তাব ও সম্মতি এবং দেনমোহর যখন ঠিক হয়ে গেল এবার আসা যাক সাক্ষীর বিষয়টা নিয়ে। মুসলিম আইনে প্রমাণ স্বরূপ দুইজন সুস্থ মস্তিষ্কের পুরুষ বা একজন সুস্থ মস্তিষ্কের পুরুষের সাথে দুইজন সুস্থ মস্তিষ্কের নারীর সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকা বৈধ বিয়ের জন্য অন্যতম শর্ত।

ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী উপরোক্ত চারটি শর্ত মান্য হলেই আইনগত-ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনে উক্ত বিয়েকে আবার রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হয়। না হলে স্ত্রীর অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হয়।

 জরিমানা বা উভয় দণ্ড

তাই বাংলাদেশ সরকার মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন - ১৯৭৪ বিধান চালু করেছেন। এ আইন বলে বিয়ের কাবিননামাকে অবশ্যই বরকে নিজ দায়িত্বে রেজিস্ট্রি করে নিতে হয়। না করা হলে ২ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

এ থেকে বুঝা যায়- বিয়ে করার জন্য ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা মানাও বিয়ে টিকার অন্যতম শর্ত। 

বাংলাদেশের বিবাহ আইন | দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা

ধর্মীয় আইন কানুন মানার পাশাপাশি দেশে প্রচলিত বিয়ের নিয়ম কানুন মানাও বিয়েকে আইন সম্মত করার পূর্ব শর্ত। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়ের সংসার ধর্ম পালন করার জন্য এবং উভয়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটা লিখিত চুক্তি দরকার যা কাবিন নামা নামে পরিচিত।

বিয়ের এই চুক্তিটাকে ধর্মীয় ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশে বাংলাদেশ সরকার মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন - ১৯৭৪ বিধান চালু রেখেছেন। এ বিধান অনুযায়ী এ দেশে মুসলিম নর-নারীর বিয়ে সম্পন্ন হয়।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন - ১৯৭৪ আইনে ইসলামের বিয়ে সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলোকে (প্রস্তাব ও সম্মতি, সাক্ষী এবং দেনমোহর) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। 

এর ব্যত্যয় ঘটালে স্বামীর ২ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখানে একটা বিষয় ব্যতিক্রম তা হল শুধুমাত্র স্বামীকেই শাস্তি প্রদান করা হয়। মেয়েকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আইন নারীদের অধিকার রক্ষার একটা রক্ষাকবচ। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হলে স্বামীরাও অকারণে কোন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে পারেনা। রেজিস্টার্ড বিয়ের স্বামী স্ত্রীকে পরিত্যাগ করলে স্ত্রী আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে ভরণপোষণ ও দেনমোহরের টাকার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।

মোটকথা যখনই আইনি স্বীকৃতির প্রয়োজন হবে তখনই বাংলাদেশের প্রচলিত বিয়ের আইন কানুন অনুযায়ী বিয়ের রেজিস্টার্ড কাবিননামা থাকা উচিত। না হলে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী বৈধ বিয়ের স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিভিন্ন রকম আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হবেন।

সবচাইতে বড় কথা- বৈধ বিয়ে ছাড়া কোন সন্তান তার পিতৃত্ব দাবী করতে পারেনা। যে কারনে সন্তান বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন রকম আর্থিক ও সামাজিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত থাকে।

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি - প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপায়

অতিরিক্ত বা বহু বিবাহ কি

বর্তমানে স্ত্রী বিদ্যমান থাকা অবস্থায় আরেক মেয়েকে বিবাহ করাকে বহুবিবাহ বলে। পবিত্র কোরআনে বহুবিবাহ শর্ত দিয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন একজন পুরুষ চারটি বিবাহ করতে পারবে যদি কোন পুরুষ সম্পদ ও স্নেহ ভালবাসা দিয়ে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সমান আচরণ করতে পারে। বাস্তবে এটা কোন পুরুষের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয় বিদায় বলা যায় যে ইসলাম এক বিয়েতে উৎসাহ দিয়েছে।

একের অধিক স্ত্রী গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরুষদের কোন বাধা না থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা আছে। তবে মনে রাখতে হবে যে একই সঙ্গে কোন পুরুষ চারজনের অধিক স্ত্রী গ্রহণ নাজায়েজ। ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা না মেনে বিয়ে সংগঠিত হলে স্বামীর বহু বিবাহের কারণে স্ত্রীর ক্ষতিগ্রস্ত থেকে বাঁচার উপায় নেই।

কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম

ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা যা আছে তাতে কোন মাসে, কোন দিনে এবং কোন সময়ে বিবাহ বৈধ সে সম্পর্কে কোনও অবশ্যই পালনীয় নির্দেশনা নেই। এ বিষয়ে নানান জনের নানান মত আছে যার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি-সম্পন্ন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

শরীয়তের দৃষ্টিতে যে কোন মাসে, যে কোন দিনে এবং যে কোন সময়ে বিবাহ বৈধ। তবে শাওয়াল মাসে এবং জুম‘আর দিনে বিবাহ করা সুন্নত। (ফতওয়া শামী-৩/৮)

ইসলামে বা দেশের আইনে পালিয়ে বিয়ের নিয়ম-কানুন বা নিয়ম ও নির্দেশনা বা রীতিনীতি 

ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা সমুহে যা আছে তাতে কোথাও বলা নেই যে ছেলে মেয়েরা তাদের বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করতে পারবেনা। তবে আমাদের দেশে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সম্মতিতে ছেলে মেয়েরা বিয়েতে সায় দেয়।

কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারী যখন নিজ সিদ্ধান্তে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায় তখন বাবা মাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এরকম বিয়েকে পালিয়ে বিয়ে করা বলে। এ বিয়ের বেলায় একটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করে।

মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে বিয়ের পর কোন সমস্যা হবে না তো? বিয়েটা বৈধ হবেতো? ছেলেরা ভাবে মেয়ের বাবা যদি কোন মামলা মোকদ্দমা করে?

মেয়েটা ভাবে ছেলের বাবা যদি কোন সমস্যা করে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়? বিশেষ করে ছেলেরা ভাবে নারী নির্যাতন মামলায় জেলে যেতে হবে কিনা? ইত্যাদি ইত্যাদি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সবাই ভাবে পালিয়ে বিয়ের নাম কোর্ট ম্যারেজ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোর্ট ম্যারেজটা কি? সবাই মনে করে যে কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বিয়ে করাটাই কোর্ট ম্যারেজ। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে ঠিক তা নয়।

বর কনের অঙ্গীকার নামা

কোর্ট মেরেজের প্রথম ধাপ হচ্ছে ১০০ টাকা বা ২00 টাকার স্ট্যাম্পে বর কনের একটা অঙ্গীকার নামা সম্পাদন করতে হয় যেখানে ঘোষণা থাকবে যে তারা সজ্ঞানে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তারা আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য উপযুক্ত অর্থাৎ কনের বয়স   অন্তত: ১৮ এবং বরের বয়স কমপক্ষে ২১।

রেজিস্টার্ড কাজী অফিস

এবার যথারীতি বর কনেকে কাজী অফিসে যেতে হবে। দুইজন সুস্থ মস্তিষ্কের পুরুষ বা একজন সুস্থ মস্তিষ্কের পুরুষের সাথে দুইজন সুস্থ মস্তিষ্কের নারীর সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকা কাবিননামা বা বৈধ বিয়ের জন্য অন্যতম শর্ত। 

উক্ত রেজিস্টার্ড কাবিননামাই বিয়ের প্রধান আইনি দলিল। কাবিননামা থাকলে বিয়ে প্রমাণের জন্য আর কোন দলিল লাগবে না। কাবিননামার কারণে দুই পক্ষের বাবা-মার আর কিছু করার থাকেনা বলে বেশিরভাগ সময় বাবা-মারা বিয়েটা মেনে নেয়। তবে খুব কম ক্ষেত্রে মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে।

পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে মোটকথা ঝুঁকি কাজ করে। তারপরেও ছেলে মেয়েরা ঝুঁকি মেনে নিয়ে ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে কোর্ট ম্যারেজের আশ্রয় নিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক দুজন ছেলে মেয়ে একে অপরের প্রতি ভালবাসার সম্মান বজায় রাখে ও নিজেদের কে সুখী রাখার আপ্রান চেষ্টা রাখে। কারন বিয়েটা করাই হয় জীবনে সুখী হওয়ার জন্য।

আরো পড়ুনঃ জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী 

সমাপনী বক্তব্য

জীবন একটি অবিশ্বাস্য উপহার। তাই ফুরফুরে মনে প্রত্যেক নর-নারীর জীবন কাটানোর জন্য বিয়ে নামক দিল্লিকা লাড্ডুর স্বাদ নেওয়া আবশ্যক। এই জটিল ও বিতর্কিত পৃথিবীতে বায়োলজিক্যাল কারনে মানুষ বিপরীত লিংগের প্রতি আকর্ষিত হবে। এটাই বাস্তবতা। অস্বীকার করার পথ নেই। 

তাই নারী পুরুষের এই সম্পর্ককে প্রাতিষ্টানিক রূপ দেওয়ার জন্য বিয়ের চুক্তিটাকে ধর্মীয় ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশে বাংলাদেশ সরকার মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন - ১৯৭৪ বিধান চালু রেখেছেন। এ বিধানে কি কি বলা আছে তা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন।  আরো মনে রাখার সুবিধার্তে ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা জানতে আপনি উপরোক্ত উপায় গুলোর সার সংক্ষেপ নিম্নের বুলেট পয়েন্ট গুলোতে আবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

  • বিয়ের জন্য পাত্রের বয়স ২১ এবং কনের বয়স ১৮ বছর হতে হবে। কম হলে 'বাল্যবিয়ে' বলে ধরা হবে। 
  • বাল্যবিয়ে সম্পূর্ন বেআইনি। 
  • এক পক্ষ বিয়ের প্রস্তাবক হবে, অন্য পক্ষ প্রস্তাবে সম্মতি জানাবে।
  • বিয়েতে দু’জন সাক্ষী থাকতে হবে।
  • বর কনের মুখে 'কবুল' শব্দটি চাপ বা প্ররোচনা ছাড়াই স্পষ্ট উচ্চারিত হতে হবে।
  • একই বৈঠকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে।
  • বিয়ের জন্য কোনও ধর্মীয় কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক নয়। 
  • কাবিননামায় দাম্পত্য জীবনে পালনের শর্তগুলো লিখা থাকবে। 
  • কাবিন নামায় তালাকের অধিকার উল্লেখ রাখা।
  • আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনায় দেনমোহর নির্ধারণ করতে হবে। 
  • সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে লিখিত বিয়ে সংক্রান্ত দলিল থাকবে, যা কাজী অফিসে সংরক্ষিত থাকে।
  • বিয়ে নিবন্ধন না করলে ২ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যায়
  • আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনও শব্দ নেই। এটি বর কনের ঘোষণা মাত্র।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য নিয়ে পড়েন, তাহলে মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বাংলাদেশের মুসলিম নর নারীর ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে বিয়ে করার নিয়ম জানতে পারলেন।

যদি ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য আরো বেশি আর্টিকেলে পেতে চান তাহলে ইসলামে বিয়ের নিয়ম-কানুন এবং দেশের আইনে বিয়ের নিয়ম ও নির্দেশনা নিয়ে আমার এ পোষ্টটি বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে প্রেরণা দিন।

আমাদের লেখা দিয়ে আপনাকে ভালো রাখতে চাই, আপনি ভাল থাকলেই আমরা ভালো থাকবো! ধন্যবাদ।

Disclaimer: আর্টিকেল সম্পর্কিত সব তথ্য অনলাইনে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভর করে লিখা। রাইট এন্ড গ্রু আপনাকে বাধ্য করছেনা উপরোক্ত তথ্যে পূর্ণ আস্থা রাখতে।


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

অর্ডিনারি আইটি কী?