যে এক উপায়ে সহজে সুখী হওয়া যায়!
কে সুখী হতে না চায়? আপনিও এর ব্যতিক্রম নন। তাইতো বিখ্যাত গায়ক মান্নাদের গানের সুরে বলতে হয়- সবাইতো সুখী হতে চায়, তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না। জানিনা লোকে যা বলে সত্যি কিনা? কপালে সবার নাকি সুখ সয়না। গানের কথাটি আসলেই সত্য। কপালে সবার সুখ সয়না। কোন মুলমন্ত্র অনুসরণ করলে আপনার কপালে সুখ এসে ধরা দিবে সে বিষয় হচ্ছে আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
![]() |
তাহলে চলুন সেই মন্দ কপালে সুখের ছোঁয়া দিতে হাজারটা উপায়টা থেকে যে এক উপায়ে সহজে সুখী হওয়া যায় - তা জানতে নিম্নের আলোচনায় মনোযোগ দিন।
পেজ সূচীপত্র
ভুমিকা
আপনি যত ধনী হোন না কেন, যতই অর্থ উপার্জন করুন না কেন, আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন জীবনে সুখী হওয়ার সহজ উপায় জানেন? আপনি কি জানেন সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা কি? পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনকুবেরও এ জায়গায় নিজেকে নিযন্ত্রণ করতে অপটু। শান্তি কোথায় পাওয়া যাবে তা জানতে সেও অস্থির। সেখানে আপনার অবস্থান কোথায় তা কি আপনি জানেন? আপনি শান্তিতে নাই, শুধুমাত্র সুখী হবার ১টা ম্যাজিক উপায় না মানার কারণে। চলুন, বিষয়টির গভীরে একটু ঘুরে আসি।
সুখ কাকে বলে
সত্যিকারের সুখকে আপনি কি দেখেছেন? সুখ কি, সুখ দেখতে কেমন? এমন প্রশ্ন উদয় হয়নি এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানের সকল শাখা সুখ কি বা সুখ কাকে বলে তার সংজ্ঞা জানার জন্য অনবর্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন বিজ্ঞানই যুৎসই সংজ্ঞা দিতে পারেনি। যে যার মতো করে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সর্বজন গ্রাহ্য কোন সংজ্ঞা এখনো আমরা পায়নি।
তাই অনেক বিজ্ঞানী সংজ্ঞা না দিয়ে গবেষনার মাধ্যমে সুখ পরিমাপের বিভিন্ন পন্থা দেখিয়েছেন। সুখ একটি অন্তর্গত বিষয়, এটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অন্যভাবে বলা যায়, এটা সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে যদি আপনার নিজস্ব শক্তিকে মূল্যায়ন না করেন। মানুষে মানুষে এটার রকমফের হয়। এটা গিরগিটির মতো রং পাল্টায়। চলুন নিম্নের পাঁচটি উদাহরন থেকে সুখের সংজ্ঞা খুঁজার চেষ্টা করি।
আপনি যখন অঢেল সম্পদের মালিক
মনে করুন, আপনি অঢেল সম্পদের মালিক, কিন্তু সমাজে আপনার মর্যাদা একটু কম। মাসলোর হায়ারর্কি থিউরি অনুযায়ী মর্যাদা পাওয়াও একটা চাহিদা। স্বাভাবিক নিয়মে যে কেউ এ চাহিদার তীব্রতা অনুভব করেন।এখন যদি আপনি নিজেকে কম্পেয়ার করা শুরু করেন, আমার কাছে তো সম্পদ রয়েছে কিন্তু সমাজের কাছে আমার গ্রহন যোগ্যতা কেন নেই? তাহলে আপনি এক দন্ড ও শান্তিতে থাকতে পারবেন না। অশান্তি আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।
সম্পদ এবং মর্যাদা দুটোই আপনি অর্জন করেছে
এবার মনে করুন সম্পদ এবং মর্যাদা দুটোই আপনি অর্জন করেছেন। কিন্তু আপনার স্ত্রীর সংগে আপনার সম্পর্ক অম্ল-মধুর। আবারো যদি আপনি অন্য কারো সাথে তুলনা করা শুরু করেন, আমার কাছে তো সম্পদ এবং মর্যাদা দুটোই রয়েছে। কিন্তু আমি ফ্যামিলি লাইফে হ্যাপি না কেন? তাহলে এবারও আপনি শান্তি পাবেন না। আসলে সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সবকিছু দিবেন না। কারন তিনি ভারসাম্যটা ভাল বুঝেন।
সম্পদ, মর্যাদা এবং স্ত্রীর সাথে ভাল সম্পর্ক কি সুখের উপায়
সম্পদ, মর্যাদা এবং স্ত্রীর সাথে ভাল বুঝাপড়াকেই আপনি খুশি থাকার মন্ত্র মনে করেছিলেন। কিন্তূ বিধি বাম। এখন মনে হলো সম্পদ, মর্যাদা ভাল ফ্যামিলি লাইফ আছে, তো কি হয়েছে? আমি তো এখনো বাবা হতে পারিনি। আমার বন্ধু তার দুই সন্তান নিয়ে কত সুন্দর লাইফ কাটাচ্ছে! আমার বিশাল ধনসম্পদ ভোগ করার জন্য কোন উত্তরাধিকারি নেই। আমার এ সম্পদ কে ভোগ করবে? এ চিন্তায় আমি অস্থির থাকি। এবারও, শান্তি দুর গগনে অবস্থান করবে।
সম্পদ, মর্যাদা, মন মতো স্ত্রী এবং দুই মেয়ে সন্তান পেলেন
সম্পদ, মর্যাদা, মন মতো স্ত্রী, দুই সন্তান এখন আপনার হাতের নাগালে। এবারও, আপনার মনে হলো সম্পদ, মর্যাদা,ফ্যামিলি এবং সন্তান আছে মানলাম। আমি তো এখনো ছেলে সন্তানের বাবা হতে পারিনি। আমারতো দুইটাই মেয়ে সন্তান। ছেলে সন্তান নেই। আমার বংশধারা কে এগিয়ে নিয়ে যাবে?
অথচ আমার বন্ধুর একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। সে খুব হাসি খুশী জীবন কাটাচ্ছে। আর আমি কেমন যেন একটা শুন্যতা বোধ করছি। শান্তি এবারো দূর আকাশে লুকাবে। সবাইতো সুখী হতে চায় এ নিয়ে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মান্না দের একটা বিখ্যত গান শোনা যাক!
সম্পদ, মর্যাদা, ফ্যামিলি, এক ছেলে সন্তান এবং এক মেয়ে সন্তান পেলেন
সবশেষে মনে করুন, সম্পদ, মর্যাদা, ফ্যামিলি, এক ছেলে সন্তান এবং এক মেয়ে সন্তান নিয়ে আমার চোখে আপনি এখন সুখের সাগরে ভাসতেছেন। কিন্তু এখনো আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। আবারো আপনার মনে হলো, সম্পদ, মর্যাদা, ফ্যামিলি, ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান দিয়ে কি করবো?
কিন্তু নতুন এক সমস্যা আপনার সামনে হাজির। এবার আপনি দেখলেন আপনার প্রতিবেশীর সন্তানতো হারভার্ডে পিএইচডি করতেছে। আপনার ছেলেটা পড়াশোনায় ডাব্বা মারতেছে। আর মেয়েটা উচ্ছন্নে গেছে। এ রকম অসংখ্য উদাহরন দেওয়া যাবে। তাই চলুন সমাধানে আসি।
সুখী হতে হলে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করতে হবে
সব চাহিদা পূরণ হলেই যে আপনি সুখী হবেন না তার জ্বলন্ত প্রমান হচ্ছে উপরের পাচঁটি উদাহরণ। কারন মানুষের এক চাহিদা পুরন হলেই নতুন চাহিদার উদয় হয়। মানুষের একটা বাজে স্বভাব আছে, সব সময় সে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে। মানুষ ভুলে যায় যে, প্রত্যেক মানুষ আরেক মানুষ থেকে সতন্ত্র। কেউ পরিপূর্ণ নয়। কোন না কোন অভাবে সে নিমজ্জিত।
কিন্তু আপনি বা আমি যা আমার নেই কিন্তু অন্যের আছে তা নিয়ে চিন্তায় মশগুল হয়ে পড়ি, অথচ আমার যা আছে তা যে অনেক মানুষের নেই তা বেমালুম ভুলে যাই। গবেষনা প্রমান করে যে, অসুখী হওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে সব সময় নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা।
সুতারাং আপনি যদি নিজেকে সুখী মানুষের কাতারে নাম লিখাতে চান তবে আপনাকে সব সময় অন্যের সাথে নিজেকে মেলানো বা তুলনা বন্ধ করতে হবে।
অন্যের সাথে তুলনাই সুখী হওয়ার পথে অন্যতম অন্তরায়
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে নিজেকে অন্য়ের সাথে তুলনা করা মানে জেনে শুনে নিজেকে অসুখী মানুষের কাতারে ফেলা। উদাহরণস্বরূপ, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে- যারা প্রায়শই নিজেদেরকে অন্যের সাথে তুলনা করে তারা হিংসুটে হয় এবং বেশীরভাগ সময় হতাশায় ডুবে থাকে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে - যারা নিজেদেরকে অন্যের সাথে তুলনা করেন তারা যারা করেন না তাদের তুলনায় কম সুখী।
অন্যদের সাথে তুলনা করা আপনার নিজের সুখকে হ্রাস করার সবচেয়ে নিশ্চিত উপায়। - দালাই লামা
অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করার টিপস
আপনার নিজের লক্ষ্যে ফোকাস করুন: মনে রাখবেন যে প্রত্যেকেরই জীবনের নিজস্ব লক্ষ্য আছে। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করার পরিবর্তে, আপনার নিজের লক্ষ্য এবং কৃতিত্বের দিকে মনোযোগ দিন।
কৃতজ্ঞতার অভ্যাস করুন
প্রতিদিন যে জিনিসগুলির জন্য আপনি কৃতজ্ঞ তা লিখে কৃতজ্ঞতা অনুশীলন করার অভ্যাস করুন। এটি আপনার আপনার যা নেই তা থেকে আপনার যা আছে তার দিকে মনোযোগ সরাতে সাহায্য করবে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করুন
সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার সময় সীমিত করার চেষ্টা করুন, কারণ এটি নিজেকে অন্যর সাথে তুলনা বাড়াতে এবং সুখ হ্রাস করতে জ্বালানির কাজ করে।
অন্যের সাফল্য উদযাপন করুন
অন্যদের প্রতি ঈর্ষা বা হিংসা বোধ করার পরিবর্তে, তাদের সাফল্য উদযাপন করুন এবং আপনার নিজের লক্ষ্যের দিকে কাজ করার প্রেরণা হিসাবে ব্যবহার করুন।
নিজের প্রতি সদয় হোন
মনে রাখবেন যে আপনি যথেষ্ট, ঠিক আপনি যেমন আছেন। নিজেকে দয়া এবং সহানুভূতির সাথে আচরণ করুন এবং যখন জিনিসগুলি পরিকল্পনা মতো না হয় তখন নিজের প্রতি খুব বেশি কঠোর হবেন না।
এতক্ষন সুখ কাকে বলে, মানুষ কেন সুখী হওয়ার জন্য একটা অভাব পুরনে অনবর্ত চেষ্টা করার পরেও আরেকটা অভাব পুরনের চক্রে পড়ে যায় তা বুঝানো হয়েছে। এখন নিবন্ধের সমাপনী বক্তব্যে যাওয়া যাক।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে- যারা প্রায়শই নিজেদেরকে অন্যের সাথে তুলনা করে তারা হিংসুটে হয় এবং বেশীরভাগ সময় হতাশায় ডুবে থাকে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে - যারা নিজেদেরকে অন্যের সাথে তুলনা করেন তারা যারা করেন না তাদের তুলনায় কম সুখী।
সমাপনী বক্তব্য
নিজের সক্ষমতাকে অন্যের সাথে তুলনা করাকে ক্যান্সারের সাথে বসবাস করার সমতুল্য। সুস্থ থাকতে হলে ক্যান্সারকে যেমন সাথে সাথে সমূলে উৎপাটন করতে হয়, তেমনি সুখে থাকতে হলে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা বাদ দিতে হবে, নিজের যা আছে তা নিয়ে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সুখী হওয়ার মুলমন্ত্রই হচ্ছে তুলনার মত দুষ্টচক্র হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নিজের গুনাবলীর উপর ভর করে এগিয়ে যাওয়া। তাহলে চলুন আমরা আমাদের নিজস্ব গুনাবলীকে আলিঙ্গন করি এবং নিজেদের মধ্যে সত্যিকারের সুখ খুঁজে নিই।
আপনি যদি নিবন্ধটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে জীবনে সুখে থাকার সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । যদি বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে নিম্নের বুলেট পয়েন্ট গুলো আবার উল্লেখ করলাম।
- সুখের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। মানুষে মানুষে এটা রকমফের হয়।
- মানুষ তার যা নেই তা নিয়ে চিন্তিত। অথচ তার যা আছে অন্যের তা নেই। এ বিষয় সে আমলে নিতে চায়না।
- নিজের প্রতি সদয় হওয়ার মাধ্যমে, অন্যের সাফল্যে হিংসা না করে এবং নিজের যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে তুলনার অভ্যাস কমানো যায়।
আর আপনার সময় থাকলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবার মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করব যাতে কিভাবে শুধুমাত্র একটা উপায়ে (অন্যের সাথে তুলনা না করে) সুখী হওয়া যায়।
আমাদের লেখা দিয়ে আপনাকে সুখী জীবন উপহার দিতে চাই, আপনি সুখে থাকলেই আমরা সুখে থাকবো! আরো যদি বেশি বেশি আর্টিকেলে পেতে চান তাহলে যে এক উপায়ে সহজে সুখী হওয়া যায় পোষ্টটি বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ। 🙏
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন