জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী। What is the way to be happy in life?
সুখ একটি অচিন পাখি। আমরা সবাই এই অচিন পাখিকে ধরার জন্য উন্মুখ। কিন্তু আমরা কয়জনা সেই রহস্যময় পাখির সন্ধান পাই? আজকের এ আর্টিকেলে জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী এ নিয়ে একজন বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানির দেখানো ছয়টি উপায় নিয়ে আলোকপাত করব।
তাহলে চলুন সেই অচিন পাখিকে বা সুখ খুঁজে পেতে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এবং শিক্ষক লরি স্যান্টোস বিশ্বখ্যাত ইয়েল ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থীদের কি পরামর্শ দিচ্ছেন তা জানতে নিম্নের আলোচনায় মনোযোগ দিন।
পেজ সুচিপত্র
ভুমিকা
মানুষ জন্মগত ভাবে সুখ আর শান্তি চায়। কিসে সত্যিই মানুষ খুশি হয়? যদিও অগণিত গবেষকরা এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, সত্য হল, এর উত্তর দেওয়া বেশ মুশকিল। আপনার সব অর্জনই বৃথা যদি না আপনি জীবনের চুড়ান্ত সুখ কি না বুঝেন? আপনি কি একটি নিখুঁত জীবন চান, নাকি একটি সুখী জীবন চান? আমি নিশ্চিত আপনি অপ্রস্তুত হয়ে গেছেন। কি উত্তর দিবেন বলে?না, এতে আপনার তেমন একটা দোষ নেই।
সত্যিকার অর্থে সুখি মানুষ কাকে বলে তাকে আপনি এত সহজ ব্যাপার মনে করেছেন যে, কখনো এটা জানতে হবে এটাই আপনার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। তাই নয় কি? আপনি মনে করেছেন অর্থ, ঐশ্বর্য্য সুখের একমাত্র কারন। কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ নয়।
বিশ্বখ্যাত ইয়েল ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থীরা সুখ খুঁজে পেতে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এবং শিক্ষক লরি স্যান্টোসের পরামর্শে নিজে ভাল থাকার উপায় খুঁজে পাচ্ছে।
তাহলে নিশ্চিত আপনাকেও জীবনের প্রকৃত সুখ কি, প্রকৃত সুখী মানুষ কে বা সুখী মানুষ কাকে বলে এবং সুখী জীবন পাওয়ার জন্য আপনাকে তার উপায় জানতে হবে। তাই চলুন জানা যাক, এত সহজ বিষয়টা কেন এত সহজ নয়।
সুখের সংজ্ঞা
আধুনিক বিজ্ঞানে, মনোবিজ্ঞানে এবং দর্শনবিজ্ঞানে সুখ কি বা সুখ কাকে বলে তার সংজ্ঞা খুঁজার অবিরাম চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোন বিজ্ঞানই গ্রহনযোগ্য সংজ্ঞা দিতে পারেনি। যে যার মতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সর্বজন গ্রাহ্য কোন সংজ্ঞা এখনো আমরা পায়নি। তাই অনেক বিজ্ঞানি সংজ্ঞা না দিয়ে গবেষনার মাধ্যমে সুখ পরিমাপের বিভিন্ন পন্থা দেখিয়েছেন।
নিখুঁত জীবন কখনোই চাওয়া উচিত নয়। মানুষের পক্ষে চূড়ান্ত সুখী হওয়ার সহজ পথ খুঁজে পাওয়া একটি অসম্ভব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কারন সুখ একটি অন্তর্গত বিষয়, এটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অন্যভাবে বলা যায়, এটা সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মানুষে মানুষে এটার রকমফের হয়। এটা গিরগিটির মতো রং পাল্টায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লরি স্যান্টোস এ বিষয়ের কৌশলবিদ হিসাবে শিক্ষার্থীদের কাছে খুব বেশী জনপ্রিয়। চলুন সুখ নিয়ে তিনি গবেষনা করে যা পেয়েছেন তা জানি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা শুকরিয়া আদায় করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস তার শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছেন, প্রত্যেক রাতে তারা যেন যাদের কাছে এবং যে কাজের জন্য কৃতজ্ঞ তার একটি তালিকা তৈরি করে রাখে।
তাঁর মতে "এটা শুনতে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যেসব শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাদের সুখী মনে হয়।"
৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন
৮ ঘন্টা করে ঘুমানোর কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হলেও কিন্তু আসলে এই কাজটা করা অনেক কঠিন, বলেন তিনি। এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতিদিন রাতে আট ঘন্টা নিয়ম করে ঘুমানো।অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, "নিশ্চিন্তে ঘুম বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।" ইতিবাচক মনোভাব যে কোন মানুষকে জীবনে সুখী করে তুলে।
নিয়ম করে ধ্যান বা মেডিটেশন করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, "প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করে পূর্ন মনোযোগ দিয়ে ধ্যান করুন। তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন তখন তিনি রুটিন করে নিয়মিত মেডিটেশন করতেন এবং প্রমান পেয়েছেন সেটা তার মন ভালো রাখে। তিনি বলেন, পূর্ন মনোযোগ দিয়ে মেডিটেশন বা ধ্যান মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।
পরিবারের সাথে ও বন্ধুদের সাথে সুন্দর সময় কাটান
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় এটা প্রমান হয়েছে - পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আরো বেশী ভালো সময় কাটাতে পারলে আপনি সুখী হবেন। বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানো একটি অমূল্য সম্পদ। এর মালিক হওয়ার অর্থ, এক অর্থে, আপনি সুখী ক্লাবের সদস্য।
সম্পদের পেছনে না ঘুরে সময়ের পেছনে ঘুরুন
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, "নিজেকে সুখী মনে করার জন্য সময় সম্পর্কে আপনার একটা ভাল ধারণা থাকা খুব বেশী প্রয়োজন।"
"অর্থ দিয়েই আমরা সম্পদের হিসাব করি। কিন্তু গবেষণায় পাওয়া গেছে, আমাদের হাতে কত সম্পদ আছে তা নির্ভর করে আসলে আমাদের হাতে কতো সময় আছে সেটার সাথে," বলেন তিনি। সহজে সুখী হওয়া যায় এ রকম একটি প্রভাবশালী উপায় হচ্ছে -সম্পদের পেছনে না ঘুরে সময়ের পেছনে ঘুরা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার কমান
অধ্যাপক স্যান্টোস মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুখের বিষয়ে মিথ্যা অনেক ধারণা পাওয়া যায়, সেসবে বেশী মনোযোগ দেওয়া উচিত হবেনা। "গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা কম ব্যবহার করেন তাদের চাইতে কম সুখী," বলেন তিনি।
সুপ্রিয় পাঠক! আজকের এই আর্টিকেলে আমি বুঝাতে চেয়েছি জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী? এ নিয়ে। আশা করি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। চলুন এবার সমাপনী বক্তব্যে।
সমাপনী বক্তব্য
আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে অধ্যাপক স্যান্টোসের দেখানো পথে জীবনে সুখে থাকার সহজ ছয়টি উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । যদি বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে নিম্নের বুলেট পয়েন্ট গুলো আবার উল্লেখ করলাম। আর আপনার তাড়া না থাকলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবার মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করব যাতে কিভাবে সুখী হওয়া যায় তা আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
- সুখের কোন সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই
- যে কোন কিছুতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা শুকরিয়া আদায় করুন
- দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন
- নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন করুন
- পরিবারের সাথে ও বন্ধুদের সাথে সুন্দর সময় কাটান
- সম্পদের পেছনে না ঘুরে সময়ের পেছনে ঘুরুন
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার কমান
আমাদের লেখা দিয়ে আপনাকে সুখী জীবন দিতে চাই, আপনি সুখে থাকলেই আমরা সুখে থাকবো!
আরো যদি বেশি বেশি আর্টিকেলে পেতে চান তাহলে জীবনে সুখী হওয়ার উপায় কী নিয়ে আমার এ পোষ্টটি বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ। 🙏
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন