রাইট এন্ড গ্রু https://www.wewritengrow.com/2023/02/what-to-do-if-you-are-upset.html

মন খারাপ থাকলে কি করবেন - What to do if you are upset!

আপনার কি কখনো মন খারাপ হয়না এ কথা কি হলফ করে বলতে পারেন? মন খারাপ একটি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপার। আজকের লিখা টি মানসিক স্বাস্থ্যের একটা অংশ 'মন খারাপ থাকলে কি করবেন' সে বিষয়ে।


মন খারাপ থাকার কারনে মহিলা কপালে হাত দিয়ে আছেন

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সময় না দিয়ে জীবন উপভোগ করা প্রায়শই অসম্ভব। আসুন মন খারাপ হলে বা মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে এই লিখা টি পড়ুন।

পেজ সুচিপত্র

ভুমিকা 

আপনার মন খারাপ হলে আপনি কি করেন? প্রিয় পাঠক মানুষ হিসাবে আপনারও মাঝে মধ্যে মন খারাপ থাকে বা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ার সব কিছু আপনার মত করে চলবেনা। কারণ সব কিছু আপনার নিয়ন্ত্রনে নেই।  সুখ, দুঃখ আনন্দ ও বেদনা নিয়েই আপনার আমার জীবন। এ নিয়ে একটা গবেষণার উল্লেখ করছি।

এর সপক্ষে একটা সমীক্ষার কথা আপনার আর্টিকেলটি পড়ার যৌক্তিকতা প্রমান করে। 

শুধুমাত্র ৩৩ শতাংশ আমেরিকানরা নিজেদের সুখী মনে করেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ তাদের জীবনে আনন্দ এবং পরিপূর্ণতা খুঁজে পেতে সংগ্রাম করে। অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ আমিরিকানের মন খারাপের মোড নিয়ে সময় পার করেন (সূত্র: হ্যারিস পোল। (২০১৭)। "হ্যাপিনেস ইনডেক্স: আমেরিকানরা খুব সুখী নয়।")

দুঃখ বিনে সুখের কোন মূল্য মানুষের কাছে নেই। কারণ এটি একে অপরের পরিপূরক। দুঃখ আছে বলেই সুখ আমাদের কাছে কাছে এত দামি। দুঃখ যখন মানুষ অনুভব করে তখনই মনে খারাপ লাগা শুরু হয় অর্থাৎ আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।


তাই আপনার মন খারাপ থাকলে কি করবেন বা মনকে ভাল করার উপায় বা টিপস নিয়ে আজকের ব্লগ পোষ্টটি লিখলাম আপনার জন্য, যাতে শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও আপনি মনকে প্রফুল্য রাখতে পারবেন।

 

আমি টিপস গুলো মানুষের কাজ থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সংগ্রহ করেছি। অনেক মানুষের সাথে কথা বলেছি, জানতে চেয়েছি এবং সমাধান খুঁজেছি। 


মন খারাপ থাকলে কি করবেন - What to do if you are upset!


অসংখ্য উপায় গুলোর মধ্যে মাত্র ১৩ টি টিপস আপনার জন্য সাজিয়েছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক আজকের মূল আলোচনায়। 


প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান

মন খারাপ থাকলে বাবা মা ভাই বোন, বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয়দের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটান৷ তাদের বলা কথা গুলো মনোযোগ ও গুরুত্ব-সহকারে শুনুন। মনের কষ্ট হালকা হয়ে যায়, যদি আপনি মনের কষ্টটা কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেন। কষ্ট প্রকাশের মাধ্যমে মন ভালো করা যেতে পারে, সব মানুষ আপনার ভাষা বুঝবে তা কখনো মনে করবেন না। কিছু  নিদিষ্ট লোক নির্ধারণ করুন এবং কষ্ট খুলে বলুন।


অপ্রিয় লোকদের থেকে দূরে থাকুন

মন খারাপ হয় এমন মানুষের সাথে কথা বলা বাদ দিন। তাতে করে আপনার জীবন সহজ হবে৷ কৌশল করে জীবন জটিল করে এমন লোকদের সাথে যোগাযোগ রাখা বাক দিন। প্রয়োজনের বেশি  অতিরিক্ত চাহিদা করবেন না। যদি করেন তাহলে মন ও শরীরে তার খারাপ প্রভাব পরে। 


কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিবেন, আরাম করবেন, বেশি বেশি করে সফল মানুষদের বই পড়বেন। আর নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করুন জীবন মানে নতুন করে নিজেকে জাগিয়ে তোলা। হেরে যাওয়ার মধ্যে জীবনের সার্থকতা নেই বরং নিজেকে নতুন রূপে ফুটিয়ে তোলার মাঝেই সফলতা।


ভাল লাগার কাজ গুলো করুন

যেসব কাজ আপনাকে সুখ ও শান্তি দেয় সেগুলো নির্ধারিত করুন। মন খারাপের সময়, যেসব কাজ বেশি করে করুন। যেমন বই পড়ুন, পছন্দের সিনেমা দেখুন, রান্না করুন, বাগানে পানি দিন, পুরনো কোন বন্ধুর সঙ্গে ফোনে গল্প করুন, প্রয়োজন হলে দেখা করুন।


সবুজ লোকালয়ে ঘুরতে যান। দেখুন! পৃথিবী কত সুন্দর! চাইলেই আপনি উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া খারাপ লাগা দূর করার জন্য অন্যের অধিকার খর্ব না করে যা করা দরকার তাই করুন।


পর্যাপ্ত ব্যায়াম করুন

বেশি খারাপ লাগলে হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন। বেশি করার দরকার নেই ২৫-৩০ মিনিট হাঁটাও মন ও শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তাতে ক্লান্তি আসবে  এবং সহজে ঘুমিয়ে যেতে পারবেন। 


মন্দ চিন্তা বাদ দিন

খারাপ ভাবনা ও চিন্তা করা বাদ দিতে হবে। মাথায় কোন ভালো চিন্তা আসছে না? তাহলে প্রথমে যে কাজটি করবেন, তা হলে আপনার জীবনে কি ভালো ঘটনা ঘটেছে, তার একটি লিস্ট করুন। সবসময় চোখে পরে এমন জায়গাএ ঝুলিয়ে রাখেন, দেখবেন- মন ভালো লাগছে।


নিজেকে বলুন, আপনি শেষ হয়ে যাননি। আপনি সব সময় কষ্টে ছিলেন না। আবারও ভালো সময় আপনার দরজায় কড়া নাড়বে, অন্ধকার সরে যাবে। আলো আসবেই।

সহনশীল হওন

নিজের প্রতি সহনশীল হওন। জীবন তার গতিতে চলবে।মন্দ ও হতাশা কিছু ঘটলে নিজেকে অতিরিক্ত দোষারোপ করা থেকে বা বার বার নিজেকে অপরাধী ভাবা বন্ধ করুন। আত্ম-সমালোচনা যেন আপনার মধ্যে খারাপ প্রভাব না আনে সেই ব্যাপারে মনযোগী হন। 

মন খারাপের সবচেয়ে বড় কারণ হল হতাশা। অন্য কারো সাথে নিজের তুলনা করা আপনার মনে বড় ধরনের মন্দ প্রভাব ফেলে। প্রিয় পাঠক, আপনি মনে করুন আপনি সম্পুর্ন ইউনিক। 

জটিল সিদ্ধান্ত নেবেন না 

অধিক কষ্ট থাকলে বড় কোন ধরনের জটিল সিদ্ধান্ত নেবেন না। মন বেশি খারাপ থাকলে মানুষের আত্মবিশ্বাসও কমে যায়। সে নিজেকে ছোট মনে করে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় লজিক্যালি ভাবতে হবে।


সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে খেয়াল করুন যৌক্তিক ও স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারছেন কিনা? নিজেকে বলুন আপনি শেষ হয়ে যাননি। আবার উঠে দাঁড়ান। কষ্টের পরে সুখ আসবেই। এটাই নিয়তির বিধান।


পর্যাপ্ত ঘুমান

আরামের একটা ঘুম দিন। ঘুম মানুষের বিশেষ মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি। রাতে ভালো  ঘুম না হলে দেহ ও মন খারাপ হতে পারে। অনেক সময় মনে হয়, কারণ ছাড়াই খারাপ লাগছে। এটা সত্যি, সবকিছুর পেছনেই কারণ থাকে।


ভালো ঘুম হলে, শরীর ও মন ফ্রেশ হয়ে যায়। তাতে করে আপনি ভালো থাকতে পারবেন। ভালো ঘুম না হলে জীবন নরমাল গতিতে চলবেনা। মনে হবে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। সবাইকে আপনার শত্রু মনে হবে।


নিজেকে গুটিয়ে বাখবেন না

রুমে একা বসে থাকবেন না। একা বসে থাকলে কষ্ট গুলো আপনাকে বেশি আঁকড়ে ধরবে। লোক সমাজে থাকার চেষ্টা করুন। একা থাকলে মানুষ একাকিত্ব অনুভব করে। এবং আপনার মনে হবে- “আমার কেউ নেই”।


নিজেকে ভালো রাখতে হলে একাকিত্ব ত্যাগ করুন। সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষ কখনো একা একা কোন সাফল্য লাভ করেনি। কথায় আছে-  দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।


নদী বা সমুদ্রের পাড়ে বসুন

বিশাল জলরাশির সামনে দাঁড়ান। সমুদ্র পাড়ে বসলে মন ভালো হয়ে যায়। মন খুলে শ্বাস নিন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। দেখবেন মন অনেকটা হালকা হয়ে যাবে। মনে হবে প্রকৃতি কত বিশাল আর আপনি কত ছোট! আপ্নারতো সীমাব্ধতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আর মন খারাপ লাগবে না। অবচেতন মনে আপনার মন ভাল হয়ে যাবে।


একা একা কান্না করুন

দরজা জানালা সব বন্ধ করে একা একা কান্নার চেষ্টা করুন। দেখবেন মন খারাপ ব্যাপারটা অনেক হালকা হয়ে গেছে। সবাই আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসবে। কারণ সান্ত্বনা দিতে পয়সা লাগেনা। 


কিন্তু মন খারাপের ব্যাপারটা থেকে বের হওয়ার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। এ কথা কে না জানে- আপনি যদি আপনাকে ভাল না বাসেন, আপনার নিজের ভাল না বোঝেন, কার দায় ঠেকা পড়ছে, আপনাকে নিয়ে চিন্তা করার! নিজের ভাল পাগলেও বোঝে। আপনার নিজ দায়িত্বে আপনার ভাল আপনি বুঝুন। মন খারাপ এমনিতেই চলে যাবে।

নিচু লেভেলে থাকান

আপনার থেকে নিচু মানুষের দিকে তাকান। তারাও তো ভালো সময় কাটাচ্ছে। তারা যদি আপনার থেকে কষ্ট পেয়েও ভালো থাকতে পারে তাহলে আপনি কেন পারবেন না! তাদের সাথে সময় কাটান এবং তাদের সাথে আলাপ করুন- কিভাবে অনেক কষ্ট মন নিয়েও সুখে তার সুখে থাকে? পজেটিভ অনুভূতি নিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন। 


আমি একদিন এক প্রতিবেশীকে জিজ্ঞেস করছিলাম আপনিতো আপনার সব সম্পদ শেষ করে দিয়েছেন আপনার কি খারাপ লাগেনা? উত্তরে উনি বললেন “যা চলে যাওয়ার তা যাবে, আটকানোর কোন সুযোগ নেই, বেছে আছি এটাই তো অনেক”। তার জীবন থেকে আমরা কি শিখলাম?  চেষ্টা করার পরেও আপনি সফল না হলে, বিধাতা নিশ্চয়ই এতে আপনার জন্য মংগল নিহিত রেখেছেন।


আসলে সব সুখ ও দুঃখ মনের ইচ্ছে, আপনি যে ভাবে জীবন নেবেন সেই ভাবেই জীবন যাবে।


আমিই পারব ভাবুন

মন খারাপ থেকে আর বের হতে পারবেন না এই ভাবনা থেকে ফিরে আসুন। মানসিক দৃড়তা অনেক বড় বড় সমস্যাকে উৎরাতে পেরেছে এ রকম নজির আপনি খুঁজ করলেই পাবেন। যদি অনেক সময় ধরে মন খারাপ থাকে, মন কোন ভাবেই ভালো করতে পারছেন না, তাহলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হলে, কাউন্সেলিং প্রয়োজন হতে পারে। আপনাকেই আপনার প্রেমে পড়তে হবে। মানুষ প্রেমের জন্য কি না করতে পার?

সুপ্রিয় পাঠক! আজকের এই আর্টিকেলে আমি  বুঝাতে চেয়েছি মন খারাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় নিয়ে। আশা করি আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। চলুন এবার সমাপনী বক্তব্যে।

উপসংহার

একটি সুস্থ সবল মন বা ফুরফুরে মন জীবন চলার পথে আবশ্যক। এই জটিল ও বিতর্কিত পৃথিবীতে আপনি না চাইলেও অনেক ঘটনা আপনার সাধ্যর বাইরে চলে যাবে। এটাই বাস্তবতা। অস্বীকার করার পথ নেই। তাই আপনি উপরোক্ত উপায় গুলোর বুলেট পয়েন্ট গুলোতে আবার চোখ বুলিয়ে নিন।

  • প্রিয়জনের সাথ সময় কাটান

  • অপ্রিয় লোকদের থেকে দূরে থাকুন

  • ভাল লাগার কাজ গুলো করুন

  • পর্যাপ্ত ব্যায়াম করুন

  • মন্দ চিন্তা বাদ দিন

  • সহনশীল হওন

  • জটিল সিদ্ধান্ত নেবেন না

  • পর্যাপ্ত ঘুমান

  • নিজেকে গুটিয়ে বাখবেন না

  • নদী বা সমুদ্রের পাড়ে বসুন 

  • একা একা কান্না করুন

  • নিচু লেভেলে থাকান 

  • আমিই পারব ভাবুন


আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে মন খারাপ হলে তা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । যদি ভালমত বুঝতে না পারেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত  আবার মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন। ধন্যবাদ। 


আরো যদি বেশি বেশি আর্টিকেলে পেতে চান তাহলে 'মন খারাপ থাকলে কি করবেন' নিয়ে আমার এ পোষ্টটি বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে প্রেরণা দিন!


আমাদের লেখা দিয়ে আপনাকে ভালো রাখতে চাই, আপনি ভাল থাকলেই আমরা ভালো থাকবো!


পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

অর্ডিনারি আইটি কী?